Saturday, May 5, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা১০৫ - ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং তার জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত

পাগলা কুত্তা আর ব্রিটিশ মধ্যাহ্নে রাস্তায় হাঁটে
১৮৮০ সাল নাগাদ কোমরের চামড়ার সঙ্গে সর্বক্ষণের জন্যে ফ্লানেলকে জুড়ে রাখার আবশ্যিক নিদান পালটে গিয়ে ফ্লানেল আর উলের মিশ্রিত বস্ত্র করা হল। এটার নাম হল কলেরা বেল্ট। আমি যখন প্রথম ভারতে আসি ১৯৫২ সালে সুয়জে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আমার সঙ্গে থাকা যাত্রীরা সাবধান করে বললেন খুব তাড়াতাড়ি আমার মধ্যাঞ্চল এই বেল্ট দিয়ে ঢেকে নেওয়ার জন্যে, বিশেষ করে আমি যদি পাখার তলায় থাকি। আমার হাতে থাকা ১৯৪৯এর মুরিজ গাইডের সংস্করণে সারাক্ষণ কাঁধে বাঁধার যোগ্য ৮ ইঞ্চি লম্বা ১২ ইঞ্চি চওড়া ফ্লানেল কোমোরবন্ধ পরার নির্শনামাটি ছিল।
এমনকি কুড়ি বছর ভারতের পাঞ্জাবের ছোট শহরে কালেক্টর আর ম্যাজিস্ট্রেটের স্ত্রীরূপে এবং শিক্ষা আধিকারিক এবং সাহিত্যিক পরাক্রান্ত ফ্লোরা এনি স্টিল হাতে গোণাদের মধ্যে অন্যতম যারা প্রশ্ন করতেন, গরমের দেশে এবং গ্রীষ্মে মোটা জামাকাপড় পরা এবং তার সঙ্গে ফ্লানেল পরা কতটা বাস্তব সম্মত। যদিও তিনি বলছেন ডাক্তারেরা যেহেতু মনে করেন এটা পরা সঠিক, এবং সেইজন্যে কোন প্রশ্ন করা যাবে না, কিন্তু তার পরের লাইনেই তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে লিখছেন গরমের দেশে রেশমের কাপড় পরার সুখদ এবং শামতি পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর মতে সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রয়োজন সঠিক খাদ্য, ঠান্ডা না খাওয়া এবং গরমে না থাকা।
এমন কি যখন প্রমান হয়ে গেল কলেরা জলবাহিত রোগ, তখনও গ্রীষ্মমণ্ডলের ব্রিটিশ, ফরাসী এবং জার্মান সেনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় কোমরবন্ধ হিসেবে এটি বাহিনীতে বহুকাল চালু ছিল। ফিলিপিন্সের দখলদার আমেরিকিয় সেনাদেরকে ফ্লানেল শার্ট পরতে বলা হয়েছিল। বাংলার সেনাবাহিনীতে ১৯৮৮ পর্যন্ত সেনারা কলেরা কোমরবন্ধটি পরছে কি না সে জন্যে নিয়মিত পরিদর্শন করতেন কর্তারা। ১৯০০ সালের পরে আর এটি কলেরা কোমরবন্ধ হিসেবে পরা হত না কিন্তু এটি পরা হত দাস্ত, পায়খানা এবংত লিভারের অসুখ রুখতে এবং মনে করা হত, এটা সঠিক এবং সুসময়ে বাহ্য পরিষ্কারে সহায়ক হয়। তলপেট নিয়ে ভারতে থাকা ব্রিটিশেরা কি ধরণের উদ্বিগ্ন ছিল তা একজন প্রাক্তন অসামরিক আমলা নতুন কেরানীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বাণি থেকে পরিষ্কার হবে। তিনি বলছেন, হিন্দুস্থানে যাওয়া নব্য যে কোন দপ্তরে চাকরি পাওয়া ব্রিটিশ যুবকদের উদ্দেশ্যে আমি একটাই শুভেচ্ছাবার্তা দেব। সেটা কি? তার সবসময় ভাল বাহ্য হোক, না হলে তার সফলতা অধরা থেকে যাবে।

ফ্লানেল আর কোমরবন্ধ পরার নিদান দেওয়া আদতে রোগের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এবং রোগ আটকানোর ধারণায় এটির চিহ্নগত গুরুত্ব অসীম ছিল। ইওরোপিয়দের দেহের কৃষ্টিগত নির্মানে দুটি অংশ কোমরের ওপরে অংশ উন্নততর কাজ কর্ম করে এবং চেতনা বজায় রাখে, হৃদয় এবং ফুসফুস অনুভূতি, জ্ঞান এবং গভীর আবেগের স্থল। ওপরের অংশটি তাই যথার্থ ভাবে মূল্য নিরুপিত হল এবং বলা হল শুদ্ধ। আর নিচের অংশটা অশুদ্ধ, আদিম প্রবৃত্তিমূলক যাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। রেনবর্ন লিখছেন ফ্লানেল বেল্ট তার কাজের প্রতীক সঙ্কেত, মৌল প্রবৃত্তিগুলোর ওপর চেপে বসে থাকা এবং প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বাঁচায়। 

No comments: