Friday, May 4, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা১০১ - ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং তার জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

অধ্যায় ৫
বস্ত্র, পরিধেয় এবং উপনিবেশিকতাবাদঃ উনবিংশ শতকের ভারত

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পোষাক
শুধু যে ইংরেজি শিক্ষিত, ধনী এবং শহুরে ভদ্রবিত্তের পরিধেয়র ঢঙের পরিবর্তন এল তাই নয়, পরিবর্তন এল আরও বড় পরিমানে সাধারণ মানুষেরও। দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ের চা এবং কফি বাগানে নিযুক্ত হওয়া আদিবাসীরা বেশ কিছু অর্থ ব্যয় করত নতুন আবিষ্কারের পাগড়ি এবং টুপিতে, আর উতসবে ইংরেজি কাটের জামাকাপড় পরতেন। মাদ্রাজ সরকারের মিউজিয়ামের সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং মাদ্রাজের এথনোগ্রাফিক সার্ভের প্রধান এডগার থার্সটন(কাস্টস এন্ড ট্রাইবস অব সাউথ ইন্ডিয়ার লেখক - অনুবাদক)সাদা পিচওয়ার্ক শার্টের ওপরে রাজা সঙ্গে এবং হাতির পেতেন্ট ওয়ালা এম্রয়ডায়্রি পরে গেলে অন্তত ছয়জন সেই কাজটা বুঝতে পারে। ছাপা ট্রেডমার্ক জনপ্রিয় হয়েছে কাশ্মীরের মহারাজজার সেনারা সুপারফাইন ছাপমারা ব্রেজার পরেন। ইওরপিয় উতপদকের প্রায় সব ধরণের ছবিছাপাওয়ালা কাপড় সরবরাহ করতেন। থার্সটনের সূত্রানুযায়ী এর কারণ হল ভারতীয়রা অদ্ভুত, বিদঘুটে সব কিছুই ঘোরতর পচ্ছন্দ করে, এবং এই অভ্যেসটি হয়েছে হিন্দু মন্দির এবং পৌরাণিক ছবিগুলি দেখার জন্যে। আরেকটি জনপ্রিয় কাপড় লন্ডনের উতপাদনকারীরা উতপাদন করতেন, সেটি হল মহিলাদের শায়া, যা কম্পোজড অব এন এন্ডলেস প্রসেসান অব হোয়াইট বাইসাইকলস অব এন্সিয়েন্ট পাটার্ন উইথ গ্রিন গিয়ারিং এন্ড ট্রেডলস, সেপারেটেড ফ্রম এচ আদার বায় আপরাইট স্টিমস উইথ গ্রিন এন্ড গোল্ড ফন্টস।
একদিকে যেমন কিছু হাতে গোণা ইওরোপিয় ভারতীয়র মধ্যে উচ্চশ্রেণীর পছন্দের ধারনা তৈরি করাবার কাজে এবং ভারতীয় শিল্পের অধোগতি রোখার জন্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন, অন্য দিকে প্রথমদিককার কিছু জাতীয়তাবাদী লেখক ভারত সরকারের উতপাদকদের আরও ধ্বংস করার নীতির বিরুদ্ধে গলা চড়াচ্ছিলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী এটা ব্রিটিশ উতপাদকেদের আধুনিক শিল্প তৈরি করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে এবং এইভাবেই ভারতীয়রা উদ্যমীরা বঞ্চিত হয়েছে। প্রথমদিককার জাতীয়তাবাদীরা যুক্তি দেখালেন, ভারতীয়দের গারীব হয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ হল সরকারের রাজস্ব নীতি।

ফলে ভারতে আমরা দেখলাম দুটি ধারনার প্রবাহ, একটা হল কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে ইওরোপিয়দের উদ্যোগে বিকশিত ব্রিটেনের এবং ভারতীয় শিল্পসাহিত্য আবিষ্কারের বিপুল প্রভাব এবং দ্বিতীয়ত প্রথমদিককার জাতীয়তাবাদীদের থেকে আসা সরকারী নীতি এবং তার জন্যে ভারতের গরীব হয়ে যাওয়া। এই দুয়ে মিলে বাংলার স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত, যদিও জটিল, কিন্তু মোদ্দা কথা হল ব্রিটিশ উতপাদকেদের বয়কট করে দেশিয় উতপাদনকে উৎসাহ দেওয়া। আন্দোলনের জোর বাড়তে থাকলে ভারতীয় তাঁতিদের চরকা কাটা সুতোয় উতপাদন কেনার জন্যে বিপুল প্রচার চলতে থাকে। পরের দশকে এই ধারণাটা মহাত্মা গান্ধী তুলে নেবেন এবং একে আরও বড় আন্দোলনের রূপ দেবেন। গান্ধী প্রভাবিত হয়েছিলেন রাসকিন আর মরিসের আধুনিক শিল্পোন্নত সমাজের সমালোচনা, যে উতপাদন ব্যবস্থা মূলত ইওরোপিয় শ্রমিকদের দেহ, মন এবং নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করছে। গান্ধী বলতেন ভারতীয়রা ইওরোপিয় অর্থনীতি এবং রাজনীতি থেকে মুক্তি পাবেন যদি তারা বাড়িতেই সুতোকাটা এবং কাপড় বোনার কত কাজগুলো করে এবং সেওই উতপাদনগুলো নিজে পরেন। তিনি তার তত্ত্বের উপযোগ বোঝাতে তিনি কংগ্রেসের পাতাকায় একটা রাজনৈতিক চিহ্ন বসালেন, সেটি হল চরকা। এবং তারপরেও ভারতের পতাকায় সেটা অন্যরূপে স্থান পাবে। এবং কংগ্রেসিদের জন্যে তিনি হাতে কাতা সুতির ধুতি, শাড়ি, পাজামা, কুর্তা এবং সাদা টুপির নিদান দিলেন। 

No comments: