Friday, February 2, 2018

অন্য দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক বিরোধিতা

হেস্টিংসের বিচারের সময় নবকৃষ্ণ, কান্তবাবু, দেবীসিং, গঙ্গাগোবিন্দ, কাশিনাথ প্রভৃতি বাহনগুলি নামোল্লেখ ও জমিদারি লাভের কথায় ওয়ারেন হেস্টিংসের মুখে কালি বার্ক শেরিডন প্রভৃতি বিখ্যাত বক্তাগণ বিলাতের প্রকাশ্য মহাসভায় করিয়াছিলেন। হেস্টিংসের জবাবে উহার বিরুদ্ধে বিশেষ কিছুই নাই। তিনি গঙ্গাগোবিন্দকে দিনাজপুরের রাজার জমিদারি ভুক্ত সালবের পরগণা ইজারা বিলি ও তাহার বেনামদারগণের জমিজমা বিলি রহিত না করা অনুরোধ পত্র ১৭৮৫ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ই ফেব্রুয়ারিতে দিয়াছিলেন। গঙ্গাগোবিন্দ এগার বত্সর ধরিয়া তাঁহার যেরূপ মনস্তুষ্টি করিয়াছিল, সেজন্য তাঁহার প্রার্থনা পূরণ করা উচিত। রাধাগোবিন্দ ও ব্রজকিশোর ঘোষের নামে ভিন্ন ভিন্ন জেলার যে সকল জমিজমা বিলি আছে উহা তাঁহার ট্রাস্টি হাসাবে বাজায় রাখা উচিত। মুসলমান রাজত্বকালে নাটোর, নদীয়া, বর্ধমান, নাড়াল, দিঘাপাতিয়া প্রভৃতি জমিদারী লাভ করে কলিকাতার গভর্নর জেনারেল ও তাঁহার সভ্যগণের বাহন মন্ডলী ইজারা গ্রহন করিয়া উহার অংশীদার হইয়াছিলেন।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাঙলার জমিদারগণের যে অপকার হয় নাই উহার সহস্রগুণ ক্ষতি হেস্টিংসের ইজারা বিলিতে হইয়াছিল। উহাকে সন্নাসী বিদ্রোহ বলিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা উড়াইয়া দিতে চাহিয়েছিল কিন্তু কাগজেকলমে অন্যরূপ আছে। হেস্টিংসের সার্টিফিকেট সভা বাংলার বনিয়াদি জমিদারগনের খাজনার হার অতি করিয়াছিল। সেই জন্য সেই সকল জমিদার কলিকাতায় বন্দী ও অপমানিত হইত এবং শেষে ইহাদের সর্বাপেক্ষা ভাল ভাল সম্পত্তি গঙ্গামন্ডল নবকৃষ্ণ, বাহারবন্দ কান্তবাবু, ভুলুয়া ও শালবেড়ে গঙ্গগোবিন্দর হয়।

তাহারা সম্পত্তি হারাইয়া ইংরাজ রাজত্বের পক্ষপাতী হন নাই। বীরভূম প্রভৃতি স্থানের জমিদার রাজারা প্রকাশ্যভাবে বিদ্রোহী হইয়াছিল ও খাজনা দেয় নাই। অগত্যা ঐতিহাসিক হান্টার সাহেবের কাছে তাহারা ডাকাত। তিনি ১৫ই জুলাই ১৭৭৩ খ্রীষ্টাব্দে গুপ্ত সভার সভাপতির কথা তাঁহার নজীর স্বরূপ উল্লেখ করিয়াছেন। ধড় মাথা বাদ দিয়া কেবল লেজ লইয়া একজাতীয় ঐতিহাসিকেরা আড়ম্বর করিয়া থাকেন। বাংলার পতিত জমি উন্নতি হয় নাই বরং অধিকাংশ জমি যাহা ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে পতিত হয় উহা চাষাদি করিয়া কোম্পানির খাজনা দিয়া জীবিকা নির্বাহ হয় নাই বলিয়াই কৃষক, জমিদারকে চুরি ডাকাতির আশ্রয় করিতে হইয়াছল। কলিকাতায় ১২শে অক্টোবর ১৭৭৯ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত মতিলাল শীলের পিতা চৈতন্য শীলের চিনা বাজারের দোকান ছিল। সেই দোকানে চুরি করায় ছয় ডাকাতের কলুটোলা বাজারে ফাঁসি হয়।

---কলিকাতার কথা, দ্বিতীয় খন্ড, রায়বাহাদুর প্রমথনাথ মল্লিক।

No comments: